Lodaer Img

অপারেশন ছাড়াই হাঁটু ব্যথার (অস্টিও আর্থ্রাইটিস) চিকিৎসা

knee pain

বয়স্ক মানুষদের মধ্যে হাঁটু ব্যথা প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দেখতে পাওয়া যায়। এর বিভিন্ন কারণের মধ্যে প্রধান কারণ অস্টিও আর্থ্রাইটিস বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়|

আমাদের দেহের জয়েন্টেগুলো নরম এবং মসৃণ আবরণ বা কার্টিলেজ দিয়ে ঢাকা থাকে। এই কার্টিলেজ যখন ক্ষয় হয়ে অমসৃণ আকার ধারণ করে তখন জয়েন্ট নাড়াচাড়ায় ব্যথা অনুভূতহয়, অনেক সময় জয়েন্ট ফুলে যায়। এটি অস্টিও আর্থ্রাইটিস বা হাঁটুর এক প্রকার বাত।

হাঁটুর অস্টিও আর্থ্রাইটিস কেন হয়?

  • বয়সজনিত ক্ষয় : বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে এই রোগ বেশি হয়।
  • বেশী ওজন : হাঁটু শরীরের ওজন বহন করে । তাই অতিরিক্ত দৈহিক ওজন হাঁটুতে বেশী চাপ সৃষ্টি করে, তাই হাঁটুর ক্ষয় বেশি হয়।
  • মাংসপেশির দুর্বলতা : দুর্বল মাংসপেশি হাঁটুর সন্ধিকে তার স্বাভাবিক স্থানে ধরে রাখতে পারে না। ফলে ঘর্ষণ বেশি হয়, ক্ষয়ও বেশি হয়।
  • অস্থিসন্ধির তরল পদার্থ বা (Synovial Fluid) কমে গেলে : দেহের বড় জয়েন্টগুলোর ভেতর এক প্রকার তরল পদার্থ থাকে যা জয়েন্ট নাড়াচাড়া করতে সাহায্য করে। এই তরল পদার্থ কমে গেলে জয়েন্টে ঘর্ষণ বেশি হয়। ফলে ক্ষয়ও বেশি হয়।
  • পেশাজনিত কারণ : যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন, অতিরিক্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করেন এবং যারা অতিরিক্ত ভার বহন করতে হয় এমন কাজ করেন তাদের হাঁটুর ব্যথা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • আঘাতজনিত কারণ বা জয়েন্ট ইঞ্জুরি

তা ছাড়া জেনেটিক বা বংশগত কারণ, জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক জয়েন্তেও অস্টিও আর্থ্রাইটিস হতে পারে।

কি ভাবে বুঝবেন যে অস্টিও আর্থ্রাইটিস হয়েছে?

অস্টিও আর্থ্রাইটিস এর উপসর্গ :

  • হাঁটুতে ব্যথা।
  • হাঁটু ফুলে যাওয়া।
  • হাঁটু গরম অনুভূত হওয়া।
  • হাঁটু ভাঁজ করতে না পারা বা জয়েন্ট জমে আছে এমন বোধ হওয়া।
  • জয়েন্টের আকৃতি পরিবর্তন।
  • কখন কখন হাঁটুর নাড়াচাড়ায় শব্দ হওয়া|
  • অপারেশন ছাড়াই হাঁটু ব্যথার (অস্টিও আর্থ্রাইটিস) চিকিৎসা কি ভাবে সম্ভব ?

অনেকে মনে করেন যে অপারেশন ছাড়া অস্টিও আর্থ্রাইটিস চিকিৎসা সম্ভব নয় , কিন্তু একথা সত্য নয় | ঔষধ ও অপারেশন ছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বেশ অনেক সাফল্য এনেছে | তার মধ্যে অন্যতম হলো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।

🩺: হাঁটুর ব্যথায় করণীয়

অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শ নিন।

  • তীব্র হাঁটুব্যথা হলে দুই-তিন দিনের জন্য পূর্ণ বা আংশিক বিশ্রাম নিতে পারেন।
  • যেসব ক্ষেত্রে ব্যথা বাড়ে, যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা, লো কমোডে বসা, লম্বা সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
  • ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা কমার জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ২০ মিনিট গরম বা ৫ অথবা ১৫ মিনিট বরফের সেঁক নিতে পারেন।
  • পায়ের সামনের দিকের মাংসপেশি যেমন কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিং, সোলিয়াস, গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস, টেন্ডোন অ্যাকিলিস ইত্যাদি সফট টিস্যুর স্ট্রেচিং করতে হবে।
  • হাঁটুর ওপরের মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য তিন কেজি ওজনের বালুর ব্যাগ কিনে পায়ের গোড়ালির সামনে বেঁধে চেয়ারে বসে পা সোজা এবং ভাঁজ করতে হবে, এটি ১০-১৫ বার করে দৈনিক তিন থেকে চার বেলা করা উচিত। হাঁটুর নড়াচড়া হয়, এমন কাজগুলো নিয়মিত করতে হবে। চেয়ার বা কোনো কিছু ধরে ওঠা–বসার মতো হালকা ব্যায়ামগুলো করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারেন (ব্যথা কমে গেলে সিজদাহ এবং হাঁটু ভাঁজ করে নামাজ পড়া যেতে পারে)। নামাজে ওঠাবসা ও রুকুতে হাঁটুর আনেক থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ হয়ে যায়।
  • সুষম ও অ্যান্টিটক্সিক খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।   

 সুনির্দিষ্ট থেরাপিউটিক এক্সারসাইজগুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে করতে পারেন। ভুলভাবে করলে আপনার ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।